১.
আমার আশেপাশের মানুষগুলো দেখে আমার খুবই মায়া হয়, করুণাও বলতে পারেন। সবার সুখী হওয়ার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা! উইল স্মিথের অভিনয় করা সত্য কাহিনী নিয়ে নির্মিত "pursuit of happyness(বানানটা এরকমই)" এর কথা মনে পড়ে। সেখানে উইল স্মিথ প্রশ্ন করে কেন মানুষের চিরায়ত অধিকারের মধ্যে লাইফ, লিবার্টি এবং পারসুট অফ হ্যাপিনেসের কথা বলা হয়েছে? শুধুই হ্যাপিনেসের কথা বলা হয়নি, পারসুট অফ হ্যাপিনেস! কারন মানুষ কোনদিন সুখ পায়না, সে সুখকে ধাওয়া করে। All his life, he pursues happiness, never quite being able to get hold of it. Happiness is an illusion to be pursued, never to be enjoyed!
২.
আর মানুষের সেই সুখ পাওয়ার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা। সেই "পারসুট" শুরু হয় ছোটকাল থেকে। আধুনিক বস্তুবাদী সমাজ তাকে সেই বাল্যকাল থেকে সুখের পিছনে ছোটায়। সে সুখ কি সেটা বুঝে উঠার আগেই স্কুলে তাকে প্রথম হতে হবে, ভাল স্কুলে ভর্তি হতে হবে, ভাল রেজাল্ট করতে হবে, সবাইকে ডিংগিয়ে উপরে উঠতে হবে এই মন্ত্রণা দেয়া হয়। বাড়ির কাজ আর পরীক্ষা, গৃহশিক্ষক আর গানের রেওয়াজ সব মিলেমিশে তার জীবনকে সেই যে একটা রেইস বানানোর চেষ্টা সেটা থেকে আর সারা জীবন তার মুক্তি নেই। পন্ঞম শ্রেনীতে উঠেছ? তোমাকে বৃত্তি পেতে হবে। বৃত্তি পেয়েছ? ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে হবে, সেখানে প্রথম হতে হবে, অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেতে হবে। এসএসসি-তে স্ট্যান্ড করতে হবে, এসএসসিতে ১০ম স্ট্যান্ড করলে এইসএসসি-তে তার থেকে আগে স্ট্যান্ড করতে হবে। নাহলে মান-সম্মান থাকবেনা! এইসএসসি-তে স্ট্যান্ড করেছ? বুয়েট-মেডিক্যাল-ঢাবি বা অন্যকোন ভালজায়গায় ভর্তি হতে হবে। তার ভাল করার সাথে শুধু তার মান-সম্মানই না, তার মা-বাবা-ভাই-বোন সবারই মান-সম্মান জড়িত। প্রতিবেশীর ছেলে বুয়েটে চান্স পেয়ে গেছে, তুমি না পেলে আমাদের মান-সম্মান থাকবে? সমাজে বুক-ফুলিয়ে হাটব কিভাবে? সে বুয়েটে চান্স পেল, তাকে ভাল ডিপার্টেমেন্টেও পেতে হবে, মেটালার্জি বা ওয়াটার রিসোর্সে পেলে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে হবে ইলেক্ট্রিক্যাল, নাহয় মান-সম্মান থাকবেনা! সেখানে তাকে ভাল করতে হবে, এরপরে অমুক-তমুক যুক্তরাষ্ট্রে ফান্ডিং নিয়ে পড়তে এসেছে, তাকেও আসতে হবে। জিআরই-র যন্ত্রণাময় ৫০০০ ওয়ার্ডের মুখস্তবিদ্যার তেলেসমাতি শুরু কর। জিআরই-টোফেল হইছে, এবার ভার্সিটি চুজ কর, প্রফেসরদের কাছে লিখ। ১০-১২ জায়গায় এপ্লাই কর, চান্স পেলে টিএশিপের টাকায় পড়ালেখা কর। সারা সপ্তাহে বার্গার আর পিৎজা খেয়ে ৫ বছর গাধার খাটুনি করে পিএইচডি কর, আবার এডভাইজার যদি বদ হয়, তাহলে লাইফ তো হেল! ডিজারটেশান টপিক অন্য কেউ করে ফেলছেনা তো সেটা নিয়ে টেনশানে ঘুম নাই।
৩.
পিএইচডি করে দেখা যাচ্ছে চাকরি নাই! পোস্ট-ডক শুরু কর, তোমার বয়স ততদিন ৩০+। তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও, বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে! দেশের সেরা ছেলের জন্য সেরা মেয়ে খুঁজ, সেটা যে আবার কত ঝামেলার বিষয় সেটা যারা জানে তারাই জানে। মেয়েকে হতে হবে সুন্দরী, শিক্ষিতা, ভাল বংশের। তার পরিবারের সবাইকে শিক্ষিতা হতে হবে। মেয়ে খুঁজতে খুঁঝতে সবার জীবনই যখন ত্যক্ত-বিরক্ত তখন অনেক ছাড়-ছুড় দিয়ে মেয়ে পাওয়া গেল, জমজমাট করে বিয়ে হল। মেয়েকে এমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা শুরু। সেখানে নিয়ে যাওয়া হল,তারপর কয়েকবছর পর ভাল চাকরি হলে, বাচ্চা নাও। এইবার দুনিয়াতে বাচ্চা নিয়ে আসার পর তার লাইফ সাইকেল শুরু। সেই শুরু থেকে আবার স্কুল.......। আপনার এদিকে আস্তে আস্তে বয়স হচ্ছে, টেনিউর পাওয়া নিয়ে ঝামেলা, টেনিউর পাওয়ার পর ফান্ডিং আনা নিয়ে ঝামেলা, কয়দিন পর এমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে ঝামেলা। মর্টগেজ দিয়ে বাড়ি কিনলেন, সেটা শোধ করতে করতে বয়স হয়ে গেল ৬০। অবসরের সময় হয়ে গেছে। আপনার সন্তানের সফলতা আপনার সফলতা হয়ে গেল। সে যদি সেভাবে সফল না হয়, আপনার সারাজীবনের সফলতা মিথ্যে মনে হবে তখন।
৪.
এটা হচ্ছে বালের জীবন। কুত্তাদের জীবন এর থেকে অনেক সুন্দর। অথচ এই বালের জীবনকেই আমরা মডেল হিসেবে নিয়েছি। মোটামোটি উপরে উল্লেখিত জীবনই আমাদের কাছে স্বপ্নের জীবন। দেখেন তার জীবনে কোন ব্যর্থতা নাই, সে যেরকম চাইছে সেরকম হইছে। আমাদের বেশিরভাগেরই জীবন এরকম হয়না, তাই কত হাহুতাশ। অনেকেই দুয়েক নাম্বারের জন্য স্ট্যান্ড করেনা, সেটা তারা সারা জীবন লালন করে। অনেকে বুয়েটে চান্স পাইনা, সেটা তার বুকে ঘা হয়ে থাকে। অনেকে বুয়েটে চান্স পেয়ে বাইরে ভাল স্কলারশিপ পাইনা। সেটা তাকে তার ক্লাশমেটদের চেয়ে নীচু করে দেয়। অনেকে ভিসা পাইনা, অনেকে পিএইচডি শেষে ভাল চাকরি পাইনা, অনেকে ট্যানিউর পাইনা, অনেকে ফান্ডিং-এর জন্য প্রজেক্ট আনতে পারেনা এনএসএফ থেকে। আপনার বউ শয়তান হতে পারে, আপনার ছেলে বখাটে, লম্পট, সন্ত্রাসী, ড্রাগ-এডিক্ট হতে পারে। আপনার মেয়ে বখাটের প্রেমে পড়তে পারে, ইয়াবাসেবী হতে পারে। এগুলি সবই সম্ভব।
৫.
তবুও কুত্তা যেমন সারাদিন খাবারের পিছনে দৌড়ায়, কিন্তু সেটা এক জায়গায় বসে খেতে পারেনা, আমরাও সেই কুত্তা-জীবন লিড করার জন্য সারাজীবনে দৌড়ের উপর আছি। আমাদের আধুনিক মানুষের কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। আমরা সবাই যাযাবর। আমাদের কোন সমাজ নেই, কোন প্রতিবেশী নেই, কোন আত্মীয় নেই। আমরা বর্ষার নদী দেখিনা, ছই-অলা নৌকায় বর্ষাযাপন আমাদের স্বপ্নে হানা দেয়না। আমাদের স্বপ্নে আসে কিভাবে কর্পোরেট-লেডারে আরো উপরে উঠব, আমাদের চিন্তায় থাকে কোন উপায়ে আরো বাড়ি করব। আমাদের জ্যোৎস্না দেখার ইচ্ছে হয়না, জ্যোৎস্না কত সুন্দর সেসব আমাদের মাথায়ও থাকেনা। আমাদের নদীতে সাতার কাটতে ইচ্ছে হয়না, পূর্ণিমার রাতে বন্ধু-বান্ধবরা মিলে জাড়িগানের আসর কি সেটাও আমরা জানিনা। আমাদের চিঠি লিখতে ইচ্ছে হয়না, চিঠি কিভাবে লিখতে হয় সেটাও আমরা ভুলে গেছি। আমাদের গ্রামের তাজা শাক খাওয়া হয়না, বিলের ঢেউ-খেলা ধানক্ষেত আমাদের মনে আকুলি-বিকুলি ছুটায়না। বালের জীবনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, এই বালের জীবনকেই সব মনে করে সেটার পিছনে ছুটতেছি।তাহলে সুখ কোথায়? সুখের জন্য তাকাতে হবে একটু অন্যজায়গায়।
৬.
রাস্তায় জ্যামে পড়লে যে হাড় জিরজিরে ছেঁড়া শার্ট গায়ে দিয়ে যে ১০-১২ বছরের ছেলেটা ফুল কিনার জন্য বা চকলেট কিনার জন্য আপনাকে বিরক্ত করে একটু তার দিকে তাকান। তার জায়গায় আপনি হওয়াটা একদমই অসম্ভব ছিলনা। তার সাথে আপনার পার্থক্য শুধু একটা জায়গায়। সে দুর্ভাগ্যবশত ভুল মা-বাবার কাছে জন্মেছিল। সে আপনার মা-বাবার ঘরে আর আপনি তার মা-বাবার ঘরে জন্মানো খুবই সম্ভব ছিল। শুধু চান্সের খেলায় সে হেরে গিয়েছে। সে যথার্থ সুযোগ পেলে আপনার থেকে মেধাবী হত হয়ত। হয়ত সে কোন বড় বিজ্ঞানী হত অথবা বড় কোন সাহিত্যিক। হয়ত সে রবীন্দনাথকে ছাড়িয়ে যেত। হয়ত সে নিয়ে আসতে ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ। অথবা সে হয়ত সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হত। দেশকে সে হয়ত অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। এসবই হতে পারত সে যদি শিক্ষার সুযোগটা পেত। আপনার বাসায় ৮-১০ বছরের যে কাজের মেয়েটা আছে তার দিকে একটু খেয়াল করে তাকান। সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠার অনেক আগেই তাকে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে যেতে হয়, সারাদিন তার রান্নাঘরেই সময় কাটে, অনেক বকাঝকা বা মারও খেতে হয়। অথচ সেও হতে পারত কোন বড় কবি বা টিউরিন-এওয়ার্ড পাওয়া কোন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট। সে হতে পারতে ফিশার-এওয়ার্ড পাওয়া ম্যাথেমেটিশিয়ান অথবা সে হয়ত হত কোন বড় ইকনমিস্ট। এসবই শুধু ভাগ্যের জন্য ভুল জায়গায় ভুল সময়ে ভুল মা-বাবার ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য হচ্ছেনা।
৭.
আজ ভালবাসা দিবসে আপনার মুল্যবান সময় হয়ত আপনার প্রেমিকার পিছনে ব্যয় করবেন। হয়ত তাকে গিফট কিনে দিবেন। হয়ত তার সাথে মান-অভিমানের পসার বসাবেন। ভালবাসা আপনার জন্য হীরন্ময় হোক, তা আমিও চাই। কিন্তু একটা অনুরোধ কি রাখবেন? এই ভালবাসা দিবসে কি মাত্র দু-ঘন্টা সময় আপনি আলাদা করবেন? কত সময় তো আমাদের কোন কারণ ছাড়াই কেটে যায়, দু-ঘন্টা সময় কি আপনি আলাদা করতে পারবেননা? এই দু-ঘন্টা সময়ে সামান্য টাকা নিয়ে একটু বের হবেন বাসা থেকে? একটু খোঁজে একজন পথশিশুকে ডেকে নিন। তাকে খুব আদর করে তার নাম জানুন, সে কোথায় থাকে, কি করে এসব জিজ্ঞেস করার দরকার নেই প্রথমেই। শুধু তাকে একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সে যা খেতে চায় আপনার সামর্থ্য মত খাওয়ান। তাকে নিয়ে যান কোন পার্কে, কোন নদীতে নৌকায় চড়তে নিয়ে যান। তার সাথে ভাব করে তার জীবনের কাহিনী শুনেন। তার কাঁধে হাত রাখেন, তার পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করেন। দু-ঘন্টা সময় কাটানোর পর আপনি চলে আসতে পারেন তাকে রেখে।
৮.
বাসায় এসে ঘুমানোর আগে রাতে একটু চিন্তা করুন, আপনি যে দুঘন্টা সময় তার সাথে কাটিয়েছেন তাতে কি আপনার ভাল লেগেছে? ভাল না লাগলে বা মনে যদি হয় এসব আপনার জন্য না তাহলে কোন কথা নেই, আপনি আপনার আগের মতই জীবন যাপন করুন। আর যদি ভাল লাগে, তাহলে একটা কাজ করুন। আপনি যে সিগারেট খান বা মাসে মাসে জিনস কিনেন বা টিউশানির টাকায় বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যান বা প্রেমিকাকে গিফট দেওয়ার জন্য খরচ করেন সেখান থেকে কিছু টাকা মাসে মাসে বাচিয়ে পথশিশুটাকে কোন পথশিশুদের নৈশ-স্কুলে ভর্তি করে দেন। তার মাসিক পড়ার খরচটা আপনিই দিবেন, তার খোঁজ খবর রাখবেন। কল্পনা করুন আপনার সামান্য ত্যাগের জন্য তার জীবনটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশ করে উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হল। চিন্তা করুন প্রতিবছর সে উপরের ক্লাসে উঠলে আপনার কতটুকু আনন্দ হবে। একটু চোখ বন্ধ করে দেখুন সে যদি এসএসসি পাশ করতে পারে আপনার চেয়ে বেশি সুখী কে হবে? সে যদি এইসএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন আপনার সুখের পরিমান হিসেব করে দেখুন। এসবই সম্ভব যদি আপনি একটু স্যাক্রিফাইস করেন। আপনি নিশ্চিত থাকেন আপনাকে সৃষ্টিকর্তা ঠকাবেননা। আসুন আমরা এবার আমাদের জীবনটাকে একটু পরিবর্তন করি। আসুন ভালবাসা দিবসে আমাদের শপথ হোক যে আমরা আমাদের জীবনে অন্তত একজন পথশিশুকে মানুষ করব। যদি সারাজীবনে অন্তত ১জন মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে আমাদের এই জীবনের কি মূল্য আছে? আমরা তো হাসিনা-খালেদাকে সারাজীবনে গালিগালাজ করলাম। কিছুই তো হলনা। চলেননা আমরা নিজেরাই পরিবর্তন শুরু করে দিই। না, প্রথম আলোর স্লোগান সর্বস্ব "বদলে যাও, বদলে দাও" না, সত্যিকার অর্থেই শুধুমাত্র ১জন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনি। সারাজীবন সুখের পিছনে তো অনেক দৌড়ালাম, এবার নাহয় একটু ভিন্নদিকে চোখ দিই। আমরা যদি নিজেরা শুধু ১জন পথশিশুর জীবন পরিবর্তন না করতে পারি তাহলে কোন মুখে হাসিনা-খালেদাকে সারাদেশের মানুসের জীবন পরিবর্তন না করতে পারার জন্য দোষ দিব? আসুন না, সারাজীবন তো ভালবাসা পাওয়ার জন্য হাহাকার করেছি, এবার একটু ভালবাসা দিয়ে দেখি?
৯.
আমার নানা বলতেন মানুষের জীবনের মূল্য নির্ভর করে সে কতটুকু স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহ করেছে তার উপর। স্মাইল-আওয়ার হচ্ছে আপনি আপনার সারাজীবনে কতটুকু মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছেন সেটাকে ঘন্টার এককে রুপান্তরিত করা। যত বেশি স্মাইল-আওয়ার তত বেশি সফল আপনার জীবন। যতবেশী স্মাইল-আওয়ার ততবেশি সুখ আপনার। সুখের পিছনে তো অনেক ঘুরলাম, সুখ কি পেয়েছি? ক্ষনস্থায়ী সুখের পিছনে না ঘুরে এবার একটু চেষ্টা করে দেখি না লম্বা সময়ের সুখ পাই কিনা। আপনি নাস্তিক হোন, আস্তিক হোন, মুসলমান হোন, খ্রীস্টান হোন, হিন্দু হোন যে কোন পর্যায়েরই হোন না কেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ঠকাবেননা, এটা আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, যদি আপনি অন্তত ১ জন মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করার জন্য মনস্থির করেন। আসুন এবারের ভালবাসা দিবস হোক আমাদের জীবনদর্শন পরিবর্তন করার অংগীকার। আসুন ভালবাসা ছড়িয়ে দিই সবখানে, কোন বিশেষ ব্যক্তিকেই ভালবাসার মুলে না রাখি। যাদের ভালবাসার দরকার, চলুননা তাদেরকেই ভালবাসাটা দিই। আসুন সময় থাকতে স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহ করি। আসুন সারাজীবন প্রতিযোগীতা করেছি সবার সাথে বিভিন্নভাবে, এবার স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহের প্রতিযোগীতায় নামি। সারাজীবনের প্রতিযোগীতায় অনেকে জিতেছি, অনেকে হেরেছি। স্মাইল-আওয়ারের প্রতিযোগীতায় কারো হার নেই, সবাই জিতে যাব। এর চেয়ে বড় সুখ আর কি হতে পারে? আসুন, আমরা এই শপথটা নিই, এই ভালবাসা দিবসেই আমরা প্রত্যেকে অন্তত সারাজীবনে একজন পথশিশুকে মানুষ করব। এটাই হোক আমাদের এবার ভালবাসা দিবসের স্লোগান এবং এই স্লোগানই আমরা বুকে ধারণ করব।
১০.
যারা প্রবাসে আছেন তাদের জন্য বলছি। আমাদের অনেকেরই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থাকে। আমাদেরকে দেশ এত বেশি দিয়েছে, আমরা দেশের জন্য কিছু করতে চাইব এটাই স্বাভাবিক। অনেক সংঘটন আছে যারা মাসে মাসে মাত্র ৫০(বা তারও কম) ডলারের বিনিময়ে দেশে একজন পথশিশুর বা গ্রামের গরীব শিশুর পড়ার ভার নিবে। এসব সংঘটন আপনাকে প্রতিমাসেই ছেলের জন্য রিপোর্ট কার্ড ডিটেলসে পাঠায়। আপনাকে কিছুই করতে হবেনা, যাস্ট প্রতিমাসে ক্রেডিটকার্ড থেকে ৫০ ডলার ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট করে দিলেই চলবে। মাসে ফোনবিল বা সিগারেটবিল তো আমরা আরো অনেক বেশি দিই, একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করার জন্য কি এটুকু করতে পারবনা? অবশ্যই পারব। ইনশাআল্লাহ আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেরাই সাধ্যমত চেষ্টা করি, আমাদের দেশ খুব শীঘ্রই মাথা তুলে দাড়াবে।
আমার এক সিনিয়র আপু এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়েছেন।
আমার আশেপাশের মানুষগুলো দেখে আমার খুবই মায়া হয়, করুণাও বলতে পারেন। সবার সুখী হওয়ার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা! উইল স্মিথের অভিনয় করা সত্য কাহিনী নিয়ে নির্মিত "pursuit of happyness(বানানটা এরকমই)" এর কথা মনে পড়ে। সেখানে উইল স্মিথ প্রশ্ন করে কেন মানুষের চিরায়ত অধিকারের মধ্যে লাইফ, লিবার্টি এবং পারসুট অফ হ্যাপিনেসের কথা বলা হয়েছে? শুধুই হ্যাপিনেসের কথা বলা হয়নি, পারসুট অফ হ্যাপিনেস! কারন মানুষ কোনদিন সুখ পায়না, সে সুখকে ধাওয়া করে। All his life, he pursues happiness, never quite being able to get hold of it. Happiness is an illusion to be pursued, never to be enjoyed!
২.
আর মানুষের সেই সুখ পাওয়ার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা। সেই "পারসুট" শুরু হয় ছোটকাল থেকে। আধুনিক বস্তুবাদী সমাজ তাকে সেই বাল্যকাল থেকে সুখের পিছনে ছোটায়। সে সুখ কি সেটা বুঝে উঠার আগেই স্কুলে তাকে প্রথম হতে হবে, ভাল স্কুলে ভর্তি হতে হবে, ভাল রেজাল্ট করতে হবে, সবাইকে ডিংগিয়ে উপরে উঠতে হবে এই মন্ত্রণা দেয়া হয়। বাড়ির কাজ আর পরীক্ষা, গৃহশিক্ষক আর গানের রেওয়াজ সব মিলেমিশে তার জীবনকে সেই যে একটা রেইস বানানোর চেষ্টা সেটা থেকে আর সারা জীবন তার মুক্তি নেই। পন্ঞম শ্রেনীতে উঠেছ? তোমাকে বৃত্তি পেতে হবে। বৃত্তি পেয়েছ? ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে হবে, সেখানে প্রথম হতে হবে, অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেতে হবে। এসএসসি-তে স্ট্যান্ড করতে হবে, এসএসসিতে ১০ম স্ট্যান্ড করলে এইসএসসি-তে তার থেকে আগে স্ট্যান্ড করতে হবে। নাহলে মান-সম্মান থাকবেনা! এইসএসসি-তে স্ট্যান্ড করেছ? বুয়েট-মেডিক্যাল-ঢাবি বা অন্যকোন ভালজায়গায় ভর্তি হতে হবে। তার ভাল করার সাথে শুধু তার মান-সম্মানই না, তার মা-বাবা-ভাই-বোন সবারই মান-সম্মান জড়িত। প্রতিবেশীর ছেলে বুয়েটে চান্স পেয়ে গেছে, তুমি না পেলে আমাদের মান-সম্মান থাকবে? সমাজে বুক-ফুলিয়ে হাটব কিভাবে? সে বুয়েটে চান্স পেল, তাকে ভাল ডিপার্টেমেন্টেও পেতে হবে, মেটালার্জি বা ওয়াটার রিসোর্সে পেলে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে হবে ইলেক্ট্রিক্যাল, নাহয় মান-সম্মান থাকবেনা! সেখানে তাকে ভাল করতে হবে, এরপরে অমুক-তমুক যুক্তরাষ্ট্রে ফান্ডিং নিয়ে পড়তে এসেছে, তাকেও আসতে হবে। জিআরই-র যন্ত্রণাময় ৫০০০ ওয়ার্ডের মুখস্তবিদ্যার তেলেসমাতি শুরু কর। জিআরই-টোফেল হইছে, এবার ভার্সিটি চুজ কর, প্রফেসরদের কাছে লিখ। ১০-১২ জায়গায় এপ্লাই কর, চান্স পেলে টিএশিপের টাকায় পড়ালেখা কর। সারা সপ্তাহে বার্গার আর পিৎজা খেয়ে ৫ বছর গাধার খাটুনি করে পিএইচডি কর, আবার এডভাইজার যদি বদ হয়, তাহলে লাইফ তো হেল! ডিজারটেশান টপিক অন্য কেউ করে ফেলছেনা তো সেটা নিয়ে টেনশানে ঘুম নাই।
৩.
পিএইচডি করে দেখা যাচ্ছে চাকরি নাই! পোস্ট-ডক শুরু কর, তোমার বয়স ততদিন ৩০+। তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও, বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে! দেশের সেরা ছেলের জন্য সেরা মেয়ে খুঁজ, সেটা যে আবার কত ঝামেলার বিষয় সেটা যারা জানে তারাই জানে। মেয়েকে হতে হবে সুন্দরী, শিক্ষিতা, ভাল বংশের। তার পরিবারের সবাইকে শিক্ষিতা হতে হবে। মেয়ে খুঁজতে খুঁঝতে সবার জীবনই যখন ত্যক্ত-বিরক্ত তখন অনেক ছাড়-ছুড় দিয়ে মেয়ে পাওয়া গেল, জমজমাট করে বিয়ে হল। মেয়েকে এমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা শুরু। সেখানে নিয়ে যাওয়া হল,তারপর কয়েকবছর পর ভাল চাকরি হলে, বাচ্চা নাও। এইবার দুনিয়াতে বাচ্চা নিয়ে আসার পর তার লাইফ সাইকেল শুরু। সেই শুরু থেকে আবার স্কুল.......। আপনার এদিকে আস্তে আস্তে বয়স হচ্ছে, টেনিউর পাওয়া নিয়ে ঝামেলা, টেনিউর পাওয়ার পর ফান্ডিং আনা নিয়ে ঝামেলা, কয়দিন পর এমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে ঝামেলা। মর্টগেজ দিয়ে বাড়ি কিনলেন, সেটা শোধ করতে করতে বয়স হয়ে গেল ৬০। অবসরের সময় হয়ে গেছে। আপনার সন্তানের সফলতা আপনার সফলতা হয়ে গেল। সে যদি সেভাবে সফল না হয়, আপনার সারাজীবনের সফলতা মিথ্যে মনে হবে তখন।
৪.
এটা হচ্ছে বালের জীবন। কুত্তাদের জীবন এর থেকে অনেক সুন্দর। অথচ এই বালের জীবনকেই আমরা মডেল হিসেবে নিয়েছি। মোটামোটি উপরে উল্লেখিত জীবনই আমাদের কাছে স্বপ্নের জীবন। দেখেন তার জীবনে কোন ব্যর্থতা নাই, সে যেরকম চাইছে সেরকম হইছে। আমাদের বেশিরভাগেরই জীবন এরকম হয়না, তাই কত হাহুতাশ। অনেকেই দুয়েক নাম্বারের জন্য স্ট্যান্ড করেনা, সেটা তারা সারা জীবন লালন করে। অনেকে বুয়েটে চান্স পাইনা, সেটা তার বুকে ঘা হয়ে থাকে। অনেকে বুয়েটে চান্স পেয়ে বাইরে ভাল স্কলারশিপ পাইনা। সেটা তাকে তার ক্লাশমেটদের চেয়ে নীচু করে দেয়। অনেকে ভিসা পাইনা, অনেকে পিএইচডি শেষে ভাল চাকরি পাইনা, অনেকে ট্যানিউর পাইনা, অনেকে ফান্ডিং-এর জন্য প্রজেক্ট আনতে পারেনা এনএসএফ থেকে। আপনার বউ শয়তান হতে পারে, আপনার ছেলে বখাটে, লম্পট, সন্ত্রাসী, ড্রাগ-এডিক্ট হতে পারে। আপনার মেয়ে বখাটের প্রেমে পড়তে পারে, ইয়াবাসেবী হতে পারে। এগুলি সবই সম্ভব।
৫.
তবুও কুত্তা যেমন সারাদিন খাবারের পিছনে দৌড়ায়, কিন্তু সেটা এক জায়গায় বসে খেতে পারেনা, আমরাও সেই কুত্তা-জীবন লিড করার জন্য সারাজীবনে দৌড়ের উপর আছি। আমাদের আধুনিক মানুষের কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। আমরা সবাই যাযাবর। আমাদের কোন সমাজ নেই, কোন প্রতিবেশী নেই, কোন আত্মীয় নেই। আমরা বর্ষার নদী দেখিনা, ছই-অলা নৌকায় বর্ষাযাপন আমাদের স্বপ্নে হানা দেয়না। আমাদের স্বপ্নে আসে কিভাবে কর্পোরেট-লেডারে আরো উপরে উঠব, আমাদের চিন্তায় থাকে কোন উপায়ে আরো বাড়ি করব। আমাদের জ্যোৎস্না দেখার ইচ্ছে হয়না, জ্যোৎস্না কত সুন্দর সেসব আমাদের মাথায়ও থাকেনা। আমাদের নদীতে সাতার কাটতে ইচ্ছে হয়না, পূর্ণিমার রাতে বন্ধু-বান্ধবরা মিলে জাড়িগানের আসর কি সেটাও আমরা জানিনা। আমাদের চিঠি লিখতে ইচ্ছে হয়না, চিঠি কিভাবে লিখতে হয় সেটাও আমরা ভুলে গেছি। আমাদের গ্রামের তাজা শাক খাওয়া হয়না, বিলের ঢেউ-খেলা ধানক্ষেত আমাদের মনে আকুলি-বিকুলি ছুটায়না। বালের জীবনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, এই বালের জীবনকেই সব মনে করে সেটার পিছনে ছুটতেছি।তাহলে সুখ কোথায়? সুখের জন্য তাকাতে হবে একটু অন্যজায়গায়।
৬.
রাস্তায় জ্যামে পড়লে যে হাড় জিরজিরে ছেঁড়া শার্ট গায়ে দিয়ে যে ১০-১২ বছরের ছেলেটা ফুল কিনার জন্য বা চকলেট কিনার জন্য আপনাকে বিরক্ত করে একটু তার দিকে তাকান। তার জায়গায় আপনি হওয়াটা একদমই অসম্ভব ছিলনা। তার সাথে আপনার পার্থক্য শুধু একটা জায়গায়। সে দুর্ভাগ্যবশত ভুল মা-বাবার কাছে জন্মেছিল। সে আপনার মা-বাবার ঘরে আর আপনি তার মা-বাবার ঘরে জন্মানো খুবই সম্ভব ছিল। শুধু চান্সের খেলায় সে হেরে গিয়েছে। সে যথার্থ সুযোগ পেলে আপনার থেকে মেধাবী হত হয়ত। হয়ত সে কোন বড় বিজ্ঞানী হত অথবা বড় কোন সাহিত্যিক। হয়ত সে রবীন্দনাথকে ছাড়িয়ে যেত। হয়ত সে নিয়ে আসতে ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ। অথবা সে হয়ত সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হত। দেশকে সে হয়ত অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। এসবই হতে পারত সে যদি শিক্ষার সুযোগটা পেত। আপনার বাসায় ৮-১০ বছরের যে কাজের মেয়েটা আছে তার দিকে একটু খেয়াল করে তাকান। সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠার অনেক আগেই তাকে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে যেতে হয়, সারাদিন তার রান্নাঘরেই সময় কাটে, অনেক বকাঝকা বা মারও খেতে হয়। অথচ সেও হতে পারত কোন বড় কবি বা টিউরিন-এওয়ার্ড পাওয়া কোন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট। সে হতে পারতে ফিশার-এওয়ার্ড পাওয়া ম্যাথেমেটিশিয়ান অথবা সে হয়ত হত কোন বড় ইকনমিস্ট। এসবই শুধু ভাগ্যের জন্য ভুল জায়গায় ভুল সময়ে ভুল মা-বাবার ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য হচ্ছেনা।
৭.
আজ ভালবাসা দিবসে আপনার মুল্যবান সময় হয়ত আপনার প্রেমিকার পিছনে ব্যয় করবেন। হয়ত তাকে গিফট কিনে দিবেন। হয়ত তার সাথে মান-অভিমানের পসার বসাবেন। ভালবাসা আপনার জন্য হীরন্ময় হোক, তা আমিও চাই। কিন্তু একটা অনুরোধ কি রাখবেন? এই ভালবাসা দিবসে কি মাত্র দু-ঘন্টা সময় আপনি আলাদা করবেন? কত সময় তো আমাদের কোন কারণ ছাড়াই কেটে যায়, দু-ঘন্টা সময় কি আপনি আলাদা করতে পারবেননা? এই দু-ঘন্টা সময়ে সামান্য টাকা নিয়ে একটু বের হবেন বাসা থেকে? একটু খোঁজে একজন পথশিশুকে ডেকে নিন। তাকে খুব আদর করে তার নাম জানুন, সে কোথায় থাকে, কি করে এসব জিজ্ঞেস করার দরকার নেই প্রথমেই। শুধু তাকে একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সে যা খেতে চায় আপনার সামর্থ্য মত খাওয়ান। তাকে নিয়ে যান কোন পার্কে, কোন নদীতে নৌকায় চড়তে নিয়ে যান। তার সাথে ভাব করে তার জীবনের কাহিনী শুনেন। তার কাঁধে হাত রাখেন, তার পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করেন। দু-ঘন্টা সময় কাটানোর পর আপনি চলে আসতে পারেন তাকে রেখে।
৮.
বাসায় এসে ঘুমানোর আগে রাতে একটু চিন্তা করুন, আপনি যে দুঘন্টা সময় তার সাথে কাটিয়েছেন তাতে কি আপনার ভাল লেগেছে? ভাল না লাগলে বা মনে যদি হয় এসব আপনার জন্য না তাহলে কোন কথা নেই, আপনি আপনার আগের মতই জীবন যাপন করুন। আর যদি ভাল লাগে, তাহলে একটা কাজ করুন। আপনি যে সিগারেট খান বা মাসে মাসে জিনস কিনেন বা টিউশানির টাকায় বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যান বা প্রেমিকাকে গিফট দেওয়ার জন্য খরচ করেন সেখান থেকে কিছু টাকা মাসে মাসে বাচিয়ে পথশিশুটাকে কোন পথশিশুদের নৈশ-স্কুলে ভর্তি করে দেন। তার মাসিক পড়ার খরচটা আপনিই দিবেন, তার খোঁজ খবর রাখবেন। কল্পনা করুন আপনার সামান্য ত্যাগের জন্য তার জীবনটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশ করে উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হল। চিন্তা করুন প্রতিবছর সে উপরের ক্লাসে উঠলে আপনার কতটুকু আনন্দ হবে। একটু চোখ বন্ধ করে দেখুন সে যদি এসএসসি পাশ করতে পারে আপনার চেয়ে বেশি সুখী কে হবে? সে যদি এইসএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন আপনার সুখের পরিমান হিসেব করে দেখুন। এসবই সম্ভব যদি আপনি একটু স্যাক্রিফাইস করেন। আপনি নিশ্চিত থাকেন আপনাকে সৃষ্টিকর্তা ঠকাবেননা। আসুন আমরা এবার আমাদের জীবনটাকে একটু পরিবর্তন করি। আসুন ভালবাসা দিবসে আমাদের শপথ হোক যে আমরা আমাদের জীবনে অন্তত একজন পথশিশুকে মানুষ করব। যদি সারাজীবনে অন্তত ১জন মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে আমাদের এই জীবনের কি মূল্য আছে? আমরা তো হাসিনা-খালেদাকে সারাজীবনে গালিগালাজ করলাম। কিছুই তো হলনা। চলেননা আমরা নিজেরাই পরিবর্তন শুরু করে দিই। না, প্রথম আলোর স্লোগান সর্বস্ব "বদলে যাও, বদলে দাও" না, সত্যিকার অর্থেই শুধুমাত্র ১জন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনি। সারাজীবন সুখের পিছনে তো অনেক দৌড়ালাম, এবার নাহয় একটু ভিন্নদিকে চোখ দিই। আমরা যদি নিজেরা শুধু ১জন পথশিশুর জীবন পরিবর্তন না করতে পারি তাহলে কোন মুখে হাসিনা-খালেদাকে সারাদেশের মানুসের জীবন পরিবর্তন না করতে পারার জন্য দোষ দিব? আসুন না, সারাজীবন তো ভালবাসা পাওয়ার জন্য হাহাকার করেছি, এবার একটু ভালবাসা দিয়ে দেখি?
৯.
আমার নানা বলতেন মানুষের জীবনের মূল্য নির্ভর করে সে কতটুকু স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহ করেছে তার উপর। স্মাইল-আওয়ার হচ্ছে আপনি আপনার সারাজীবনে কতটুকু মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছেন সেটাকে ঘন্টার এককে রুপান্তরিত করা। যত বেশি স্মাইল-আওয়ার তত বেশি সফল আপনার জীবন। যতবেশী স্মাইল-আওয়ার ততবেশি সুখ আপনার। সুখের পিছনে তো অনেক ঘুরলাম, সুখ কি পেয়েছি? ক্ষনস্থায়ী সুখের পিছনে না ঘুরে এবার একটু চেষ্টা করে দেখি না লম্বা সময়ের সুখ পাই কিনা। আপনি নাস্তিক হোন, আস্তিক হোন, মুসলমান হোন, খ্রীস্টান হোন, হিন্দু হোন যে কোন পর্যায়েরই হোন না কেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ঠকাবেননা, এটা আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, যদি আপনি অন্তত ১ জন মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করার জন্য মনস্থির করেন। আসুন এবারের ভালবাসা দিবস হোক আমাদের জীবনদর্শন পরিবর্তন করার অংগীকার। আসুন ভালবাসা ছড়িয়ে দিই সবখানে, কোন বিশেষ ব্যক্তিকেই ভালবাসার মুলে না রাখি। যাদের ভালবাসার দরকার, চলুননা তাদেরকেই ভালবাসাটা দিই। আসুন সময় থাকতে স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহ করি। আসুন সারাজীবন প্রতিযোগীতা করেছি সবার সাথে বিভিন্নভাবে, এবার স্মাইল-আওয়ার সংগ্রহের প্রতিযোগীতায় নামি। সারাজীবনের প্রতিযোগীতায় অনেকে জিতেছি, অনেকে হেরেছি। স্মাইল-আওয়ারের প্রতিযোগীতায় কারো হার নেই, সবাই জিতে যাব। এর চেয়ে বড় সুখ আর কি হতে পারে? আসুন, আমরা এই শপথটা নিই, এই ভালবাসা দিবসেই আমরা প্রত্যেকে অন্তত সারাজীবনে একজন পথশিশুকে মানুষ করব। এটাই হোক আমাদের এবার ভালবাসা দিবসের স্লোগান এবং এই স্লোগানই আমরা বুকে ধারণ করব।
১০.
যারা প্রবাসে আছেন তাদের জন্য বলছি। আমাদের অনেকেরই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থাকে। আমাদেরকে দেশ এত বেশি দিয়েছে, আমরা দেশের জন্য কিছু করতে চাইব এটাই স্বাভাবিক। অনেক সংঘটন আছে যারা মাসে মাসে মাত্র ৫০(বা তারও কম) ডলারের বিনিময়ে দেশে একজন পথশিশুর বা গ্রামের গরীব শিশুর পড়ার ভার নিবে। এসব সংঘটন আপনাকে প্রতিমাসেই ছেলের জন্য রিপোর্ট কার্ড ডিটেলসে পাঠায়। আপনাকে কিছুই করতে হবেনা, যাস্ট প্রতিমাসে ক্রেডিটকার্ড থেকে ৫০ ডলার ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট করে দিলেই চলবে। মাসে ফোনবিল বা সিগারেটবিল তো আমরা আরো অনেক বেশি দিই, একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করার জন্য কি এটুকু করতে পারবনা? অবশ্যই পারব। ইনশাআল্লাহ আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেরাই সাধ্যমত চেষ্টা করি, আমাদের দেশ খুব শীঘ্রই মাথা তুলে দাড়াবে।
আমার এক সিনিয়র আপু এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন